Sunday, February 2, 2025

অভিশপ্ত প্রেম

 


BUY NOW

ভূমিকাঃ

ভালোবাসা কি সত্যিই মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে? নাকি কিছু ভালোবাসা এতই তীব্র যে, তা অভিশাপ হয়ে ফিরে আসে?


রাত তখন প্রায় তিনটা। নিঃশব্দে বইছে হিমেল বাতাস। দূরের ঝোপঝাড় থেকে ভেসে আসছে পেঁচার ডাক। জোৎস্না রাতের আবছা আলোয় পুরনো জমিদার বাড়িটি যেন মৃত অতীতের সাক্ষ্য বহন করছে।

রিদয় দাঁড়িয়ে আছে সেই বাড়ির সামনে, গা ছমছমে অনুভূতি নিয়েও পা বাড়াল ভেতরে।

অতীতের ছায়া

এই জমিদার বাড়ির গল্প সে ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছে। বলা হয়, এখানে একসময় বাস করত তরুণী কিরণমালা, যার সৌন্দর্যে সবাই মুগ্ধ ছিল। কিন্তু এক অভিশপ্ত রাতে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তারপর থেকে, যারাই এই বাড়িতে এসেছে, তারা আর ফিরে যায়নি।

কিন্তু রিদয়ের কৌতূহল তাকে ঠেকাতে পারেনি। সে এক অদ্ভুত টান অনুভব করছিল এই বাড়ির প্রতি।

দরজার সামনে এসে হাত রাখতেই শীতল একটা বাতাস ছুঁয়ে গেল তাকে। দরজাটা নিজের থেকেই খুলে গেল। সে ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকল। ভাঙাচোরা আসবাব, ধুলো জমা চেয়ারের পাশে পড়ে থাকা পুরনো আয়নাটা এক অজানা রহস্য লুকিয়ে রেখেছে।

আত্মার উপস্থিতি

হঠাৎ করে সে অনুভব করল, কেউ একজন তাকে দেখছে। পেছন ফিরে তাকাতেই বুকের ভেতর ধক করে উঠল—একটি সাদা শাড়ি পরা ম্লান মুখের মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

"কে তুমি?"

মেয়েটির ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটল। "আমার নাম কিরণমালা। আর তুমি রিদয়, তাই না?"

রিদয় চমকে উঠল। সে কীভাবে জানল তার নাম?

অবিচ্ছিন্ন টান

দিন যেতে লাগল, রিদয় বুঝতে পারল, সে কিরণমালার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। কিরণমালার চোখের গভীরে এক অদ্ভুত বিষাদ ছিল, যা তার মন ছুঁয়ে যাচ্ছিল।

একদিন, সে জিজ্ঞেস করল, "তোমার কী হয়েছিল?"

কিরণমালার চোখ দুটো নরম হয়ে এল। "আমার প্রেম ছিল এক জমিদারের ছেলের সঙ্গে। কিন্তু আমার প্রেম মেনে নেয়নি সমাজ। এক রাতে আমাকে মেরে ফেলা হয়। কিন্তু আমার আত্মা এখানেই রয়ে গেছে, অপেক্ষায়..."

"কিসের অপেক্ষা?"

"কাউকে খুঁজছি, যে আমাকে মুক্তি দিতে পারবে।"

রিদয়ের বুক কেঁপে উঠল। সে কি পারবে কিরণমালাকে মুক্তি দিতে?

প্রেম নাকি অভিশাপ?

রিদয়ের মনে হলো, সে ধীরে ধীরে কিরণমালার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যে একটা ভয়ও ছিল।

এক রাতে, সে যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছিল, তখন তার প্রতিবিম্বে কিরণমালাকে দেখল। হঠাৎ করেই কিরণমালার চেহারা বদলে গেল—তার চোখ থেকে রক্ত ঝরতে লাগল, ফর্সা মুখটা ভীষণ বিকৃত হয়ে গেল।

রিদয় আতঙ্কিত হয়ে পেছনে ঘুরতেই কিরণমালা স্বাভাবিক হয়ে গেল।

"তুমি ভয় পেয়েছো?"

রিদয় কোনোমতে মাথা নাড়ল, কিন্তু তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

একদিন রাতে, কিরণমালা তাকে বলল, "তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে মুক্ত করো।"

"কিন্তু কীভাবে?"

"আমার আত্মাকে বিদায় দিতে হলে তোমাকে আমাকে গ্রহণ করতে হবে।"

রিদয়ের শরীর শিউরে উঠল। "মানে?"

কিরণমালা এগিয়ে এসে বলল, "তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো, তবে আমার সঙ্গে চিরকালের জন্য থেকে যাও।"

রিদয়ের মাথা ঝিমঝিম করছিল। সে কি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবে? নাকি পালিয়ে যাবে?

সে জানত, ভালোবাসা শুধু সুখের নয়, তাতে ভয়ও থাকে। কিন্তু সে কি ভালোবাসার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দেবে?

শেষ পরিণতি

সকাল হলে গ্রামের লোকেরা জমিদার বাড়ির সামনে ভিড় জমাল। তারা দেখল, রিদয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে, ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত হাসি। আর তার পাশের দেওয়ালে লেখা—

"ভালোবাসা মৃত্যুর চেয়েও শক্তিশালী।"

No comments:

Post a Comment