প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, নির্বাচন যে করেই হোক ফেব্রুয়ারির (২০২৬ সালের) প্রথমার্ধে হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই এই নির্বাচনকে ঠেকাতে পারে। সে জন্য যত প্রস্তুতি লাগে সেগুলো নেওয়া হচ্ছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আজ রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এসব কথা বলা হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলসহ সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এই বৈঠক হয়। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের নয়জন উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে ফ্যাসিবাদী শক্তি যখন দেখছে দেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জুলাইয়ের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দ্রুতই এগোচ্ছে, তখন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এর ফলে তারা দেশের শান্তি বিনষ্ট করার জন্য গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে। এটা এখন শুধু আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নয়, এটা একটা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈঠকে বলা হয়েছে, দেশের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন আসন্ন দুর্গাপূজায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক চেষ্টা হতে পারে। এ বিষয়ে তিনি গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা যেন আগে থেকেই নেওয়া যায়। যাতে কোনো রকমের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। এ ছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সব ধরনের ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তাব্যবস্থা মনিটরিং করতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে বলা হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনকে আগাম প্রস্তুতি রাখতে হবে। এর পাশাপাশি ডাকসু নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর হয়, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে উন্নত হয়, সে জন্য সরকার সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর গড়ে প্রতিদিন চারটি বিক্ষোভ বা ঘটনা ঘটেছে। বিপ্লবের পর যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে সবাই দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবার শরিফে হামলা-ভাঙচুর এবং নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আজ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত উপদেষ্টারা হলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এ ছাড়া বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) খোদা বকশ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
